সববাংলায়

১৫ জুলাই || বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস

প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের  কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস (World Youth Skills Day)।

প্রতিবছর সারাবিশ্বে ১৫ জুলাই বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে। সারা বিশ্বের যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত কৌশলগত প্রশিক্ষণ, কর্ম উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়গুলির গুরুত্ব যে কতখানি এই নির্দিষ্ট দিনটি পালনের মাধ্যমে সেসব সম্পর্কেই সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। বর্তমান ও ভবিষ্যত বিশ্বের কর্মযজ্ঞের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার কাজে সুদক্ষ যুব সম্প্রদায়ের ভূমিকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেই বার্তাও মানুষের দরবারে পৌঁছে দেয় এই বিশেষ দিনটি। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যে কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং স্থানীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আরও যেসমস্ত প্রাসঙ্গিক দক্ষতার প্রয়োজন সেগুলির গুরুত্ব সম্পর্কে যাতে সকলে সচেতন হয়ে উঠতে পারে সে-কারণেই বিভিন্ন কর্মকান্ড সহযোগে বিশ্বের কোনায় কোনায় যুব দক্ষতা দিবস উদযাপিত হয়ে থাকে। আজকের যুবসম্প্রদায়ের জন্য একটি উন্নততর আর্থ-সামাজিক কাঠামো নির্মাণ এবং বেকারত্ব সমস্যাকে মোকাবিলা করার জন্য এমন একটি দিন ও তৎসংলগ্ন নানা উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নিঃসন্দেহে। বিশ্বজুড়ে যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব এবং কর্মহীনতা কমাতে এই দিনটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে, তেমনই আশা করা হয়েছে।

২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শ্রীলঙ্কার নেতৃত্বে উত্থাপিত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এবং ১৫ জুলাই তারিখটিকে বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের গুরুত্বকে বিশ্বস্তরে তুলে ধরার জন্য ১৩৪টি উন্নয়নশীল দেশের সমাহারে গঠিত জি-৭৭ এবং চীনের সহায়তায় শ্রীলঙ্কা এই প্রস্তাবটির সূচনা করেছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব এবং যুব বিষয়ক বিশেষ দূত জনাব আহমেদ আলহেনদাউই এবং তাঁর কার্য্যালয় প্রথম থেকেই এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছিলেন।

আরও পড়ুন:  ২১ মার্চ ।। বিশ্ব কবিতা দিবস

এছাড়াও এই দিনটি যুবক-যুবতীদের সঙ্গে সরাসরি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে যোগাযোগ ও কথোপকথনের সুযোগ করে দেয়। ফলে তাদের কাছে অনেকগুলি সম্ভাবনার দরজা খুলে যায়, কর্মক্ষেত্রকে জানতে পারে, বুঝতে পারে তারা। এখানে উল্লেখ্য যে, স্কিল ইন্ডিয়া মিশনটিও এই ১৫ই জুলাই শুরু হয়েছিল।

দক্ষ যুবক-যুবতীদের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং তাদের দক্ষতার উন্নতি সাধনের জন্য ২০৩০ অ্যাজেন্ডা নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছে। এই অ্যাজেন্ডায় শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ অর্জনের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হবে। এই যে তরুণ-তরুণীদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা, তাদের উপযুক্ত বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, এর ফলে ২০১৭ সাল থেকে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, প্রশিক্ষণে যুবকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালে ২৫৯ মিলিয়ন যুবককে এনইইটি (NEET) হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল। এই সংখ্যা ২০১৯-এ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৭ মিলিয়নে। ২০২১ সাল নাগাদ এটি প্রায় ২৭৩ মিলিয়নে উন্নীত হয়।

প্রতিবছর এই বিশেষ দিনটি নানাভাবে পালিত হয়ে থাকে। একটি করে নির্দিষ্ট থিম বা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়।  মূলত কর্মদক্ষতা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ক বিভিন্ন ইভেন্ট, সেমিনারের আয়োজন তো করা হয়ে থাকেই, তাছাড়াও সবচেয়ে জরুরি যুবক-যুবতীরা সরাসরি বিভিন্ন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নিয়োগকর্তা, নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ পায়। ২০১৯ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – ‘জীবন ও কর্মের জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়া’ (Learning to learn for life and work) । কিন্তু ২০২০ সালে ভয়ঙ্কর কোভিড মহামারী যখন বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল তখন এই ধরনের অনেক ইভেন্ট, বিশেষত এই সরাসরি সংযোগের ব্যপারগুলি থমকে গিয়েছিল। যদিও উদ্যোগ থেমে থাকেনি। ২০২০তে মহামারী পরিস্থিতি যখন তুঙ্গে তখন অনলাইন আলোচনার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সেবছর সমস্ত ইভেন্ট যে প্রতিপাদ্যটিকে ঘিরে হয়েছিল, সেটি ছিল – ‘প্রাণোচ্ছল যুবাদের জন্য প্রশিক্ষণ’ (Skills for a Resilient Youth)। কোভিডের ফলে যে অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছিল গোটা বিশ্বকে তার মোকাবিলা করার কৌশল অন্বেষণ সেবছর নানা ইভেন্টের বিষয় ছিল। ২০২১ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – ‘অতিমারীর পর যুবাদের প্রশিক্ষণের পুনর্গঠন'(Re imagining youth skills post-pandemic)। সেবছরও ভার্চুয়াল ইভেন্টের আয়োজন করা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। ইভেন্টটি জাতিসংঘে শ্রীলঙ্কা ও পর্তুগালের স্থায়ী মিশন, যুব মহাসচিবের দূতের কার্য্যালয়, ইউনেস্কো এবং আইএলও (ILO) দ্বারা সংগঠিত। ভারতবর্ষে এই দিনটি উপলক্ষে সেবছর দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা মন্ত্রক একটি ডিজিটাল কনক্লেভের আয়োজন করেছিল। ২০২২ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – ‘ ভবিষ্যতের জন্য যুবাদের প্রশিক্ষণের রূপান্তর’ (Transforming youth skills for the future)। ২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য – ‘ শিক্ষক, প্রশিক্ষক এবং যুবাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া’ (Skilling teachers, trainers and youth for a transformative future)।

আরও পড়ুন:  ১৭ অক্টোবর ।। আন্তর্জাতিক দারিদ্র দূরীকরণ দিবস

তথ্যসূত্র


  1. https://unevoc.unesco.org/
  2. https://www.un.org/
  3. https://worldskills.org//
  4. https://m-jagranjosh-com.cdn.ampproject.org/
  5. https://vikaspedia.in/

error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন।

Discover more from সববাংলায়

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

চৈতন্যদেবের অসামান্য জীবনী দেখুন

চৈতন্য জীবনী

ভিডিওটি দেখতে ছবিতে ক্লিক করুন