রিশপ ভ্রমণ

রিশপ ভ্রমণ

লাভা-লোলেগাঁও-এর খুবই কাছে পাহাড়ের গায়ে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ফুট উপরে ছোট্ট একটা ছবির মতো সুন্দর গ্রাম রিশপ। চারদিকে রয়েছে অসংখ্য পর্বতশৃঙ্গ, তার মধ্যে রোদের সোনালি চাদরে মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘাও জেগে থাকে যেন। মনভোলানো প্রকৃতির সৌন্দর্যের মধ্যে সবুজ উপত্যকায় ঢাকা গোটা গ্রাম দেখতে কার না ভালো লাগে! তার উপর সান্দাকফুর পরেই পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ টিফিনদাঁড়া রয়েছে এই রিশপেই। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত ভ্রমণস্থান বলতে দার্জিলিং, কালিম্পং, লাভা, লোলেগাঁও-এর পাশাপাশি রিশপ একটি অপরিহার্য নাম। সপ্তাহান্তে দু-তিন দিনের ছুটিতে ঘুরে আসাই যায় পাহাড় ঘেরা এই গ্রামে। পাহাড়চূড়া থেকে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখার যে স্বপ্নের সাধ তা মিটিয়ে নিতে হাতছানি দেয় এই রিশপ।

কালিম্পং জেলার লাভা-লোলেগাঁও সার্কিটের তথা কালিম্পং ২ সম্প্রদায় উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত একটি গ্রাম রিশপ। এই গ্রামের আশেপাশেই রয়েছে লাভা, লোলেগাঁও, পেডং, কোলাখাম, ঋষি, আরিতার ইত্যাদি। লাভা থেকে মাত্র ১২ কিমি. দূরত্বে অবস্থিত এই রিশপ। তাছাড়া নিউ জলপাইগুড়ি থেকে রিশপের দূরত্ব ১১০ কিমি. এবং কালিম্পং থেকে এই দূরত্ব ২৮ কিমি.। সমুদ্রতল থেকে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত এই গ্রাম। শিলিগুড়ি থেকে চালসা হয়ে ৩১ নং জাতীয় সড়ক চলে গেছে সোজা গৌহাটিতে, এই চালসা থেকে রিশপ পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ২ ঘন্টা।

রিশপ। চিত্র ইন্টারনেট।

‘রিশপ’ কথার অর্থ হল পাহাড়ের মাথায় একলা গাছ। পাহাড়ের মাথাতেই এই রিশপ গ্রাম, তার নিজস্ব অনাবিল সৌন্দর্য নিয়ে বেড়ে উঠেছে। স্থানীয়দের মুখে মুখে প্রচলিত লোককথা অনুসারে তিব্বতি ভাষায় ‘রি’ কথার অর্থ হল পাহাড়চূড়া আর ‘শপ’ বলতে সুপ্রাচীন কোনও গাছকে বোঝায়। মোটামুটিভাবে ১৯৯৮ সাল থেকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে রিশপ গ্রামটি পরিচিতি পেতে থাকে। যদিও তার আগে ১৯৯০-এর শুরুর দিক থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বন দপ্তর এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় রিশপকে একটি অভূতপূর্ব পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন স্থান হিসেবে প্রচার করা শুরু হয়েছিল।

কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাব্রু, পাণ্ডিম, সিনিয়ালচু ইত্যাদি নানা পর্বতশৃঙ্গের মাঝে অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা মাখা গ্রাম রিশপ। এই গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির বারান্দায় শোভা পায় অজস্র রঙ-বেরঙের ফুল আর অর্কিড। ঝকঝকে ছবির মত নীলাভ আকাশ জুড়ে সবসময়ই জেগে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘা কিংবা অন্য শৃঙ্গগুলি। ভারত আর নেপালের মোট দশটি পর্বতশৃঙ্গ একত্রে রিশপ থেকে দেখা যায়। প্রচুর পাখিও রয়েছে রিশপে। নানা জাতের পাখি দেখার একমাত্র ঠিকানা রিশপ। কাছেই রয়েছে নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান। ফলে রিশপের চারপাশে জঙ্গলের কমতি নেই। দূর-দূরান্ত থেকে ভেসে আসা মেঘ মাঝে মাঝেই বন্দি হয়ে পড়ে এই সবুজের কারাগারে। শীতে হালকা কুয়াশা ঘেরা এই গাছেদের সারির ভিতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি। কাঁচা রাস্তার মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে লাভা পর্যন্ত ট্রেক করে চলে যাওয়া যায় অনায়াসেই। নাথুলা আর জেলেপলা গিরিখাতের কিছুটা অংশও এই রিশপ থেকেই চোখে পড়ে। সান্দাকফুর পরেই পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ টিফিনদাঁড়া রিশপের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এই ভিউ পয়েন্ট থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার অনুভূতি ভোলার নয়। পাইন বনের মধ্য দিয়ে কিছুটা হেঁটে উপরে উঠে আসতে হয় এই টিফিনদাঁড়া ভিউ পয়েন্টে। পাহাড়ের ধাপে ধাপে চাষের দৃশ্যও মন কেড়ে নেবে। পাইন, বার্চ, রোডোডেনড্রনের সারি সবসময় সঙ্গী হবে পাহাড়ের উপরে উঠে আসার সময়। ভাগ্য ভাল থাকলে দূরবীনের ওপাশে চোখে পড়ে যেতে পারে জার্ক সাইডেড ফ্লাই ক্যাচার, গ্রিন ব্যাকেট টিট, রুফাস সিবিয়া ইত্যাদি পাখির অস্তিত্ব। সূর্যাস্তের পর সব শান্ত, শুনশান। গোটা গ্রামে খালি গুটিকতক আলো জ্বলে ওঠে, অদ্ভুত নিস্তেল আঁধারে ঢেকে যায় চারপাশ। এ এক আলাদা অনুভূতি।

ট্রেনে করে আসতে হলে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে সেখান থেকে সুমো বা অন্য গাড়ি ভাড়া করে সোজা রিশপে পৌঁছানো যায়। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে রিশপের দূরত্ব ১১০ কিমি এবং যেতে সময় লাগে মোটামুটি ঘন্টা তিনেক। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী নিউ জলপাইগুড়ি থেকে রিশপের গাড়ি ভাড়া মোটামুটিভাবে ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে রিশপ আসার সময় লাভা পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি ভালই, কিন্তু তারপর থেকে রাস্তার অবস্থা খুবই শোচনীয়। ফলে আগে থেকে মানসিক প্রস্তুতি থাকা দরকার। তবে চাইলে প্রথমে নিউ মাল জংশনে নেমে সেখান থেকে গাড়িতে করে প্রথমে লাভা এবং লাভা থেকে ১২ কিমি. পথ পেরিয়ে রিশপে আসতে পারেন। সাধারণভাবে লাভা-লোলেগাঁও-রিশপ একত্রেই ঘুরতে আসেন মানুষজন, তাই দ্বিতীয় পথটিই সবথেকে সুবিধেজনক হবে। আবার লাভায় গাড়ি থেকে নেমে এক দিন কাটিয়ে আশেপাশের সাইটসিইং করে পরের দিন ট্রেক করেও চলে আসা যায় রিশপে। ট্রেকিং-এর রাস্তায় লাভা থেকে রিশপের দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার। রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষদের কাছে এই রাস্তাটা অত্যন্ত লোভনীয়। বিমানে আসতে চাইলে নিকটবর্তী বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে অথবা সরকারি বাসে ১১৭ কিমি. দূরে লাভায় নামতে হবে, তারপর সেখান থেকে একইভাবে গাড়ি করে রিশপ। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ধরেও রিশপে আসা যায়।

রিশপে থাকার জন্য সরকারি, বেসরকারি প্রচুর হোটেল, লজ ইত্যাদি রয়েছে। বন উন্নয়ন নিগমের নির্দিষ্ট রিসর্ট রয়েছে। তবে রিশপের থাকার জায়গার মধ্যে বিখ্যাত লাভলি রিসর্ট আর প্যারাডাইস ভিলা। এছাড়া রয়েছে নেওড়া ভ্যালি রিসর্ট, সানটেক ইকো রিসর্ট ইত্যাদি। ভ্রমণের মরসুমে আসতে হলে আগে থেকে হোটেল বুক করে তবেই আসা উচিত। এছাড়া স্থানীয় শেরপা ও লেপচাদের পরিচালিত বেশ কিছু সুন্দর কটেজ রয়েছে থাকার জন্য। হোটেলেই খাবার পাওয়া যায়, তবে রিশপের মধ্যে কোনও বাজার-হাট নেই, তাই সব কিছুই লাভা থেকে আনতে হয়। সে কারণে এখানে খাবারের খরচ সামান্য বেশি। প্রতি দিনে মাথাপিছু খাবারের খরচ পড়ে কমপক্ষে ৩০০ টাকা। কিছু কিছু হোটেল বা রিসর্টে ব্রেকফাস্ট বিনামূল্যে দেওয়া হয়। তবে রিশপে থাকতে হলে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, এখানে জল ও বিদ্যুৎ-এর সরবরাহ খুব একটা ভাল নয়। হোটেলের কর্মীরা জল অপচয়ের ব্যাপারে বারবার নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে দেন, সন্ধের পর ঘরে আলো জ্বলে ঠিকই, কিন্তু তার ঔজ্জ্বল্য খুব একটা বেশি থাকে না।

রিশপের দ্রষ্টব্য বলতে গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর এখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ টিফিনদাঁড়ার ভিউ পয়েন্ট থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা। রিশপ থেকে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে দেড় কিলোমিটার পথ ট্রেক করে আসাই যায়। সূর্যোদয় দেখার জন্য অন্ধকার থাকতেই বেরিয়ে পড়তে হবে কারণ যেতে মোটামুটি ঘন্টাখানেক সময় তো লাগবেই। তাছাড়া ট্রেকিং বা পাহাড়ের চড়াই ওঠায় অভ্যস্ত না হলে থেমে থেমে চলাই শ্রেয়, সেক্ষেত্রেও অতিরিক্ত সময় লাগে। টিফিনদাঁড়ায় পৌঁছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, পাণ্ডিম, তালুং, রাথুং, সিম্ভো, নরসিং, সিনিয়ালচুর মত অসংখ্য পর্বতশৃঙ্গ দেখা যায়। আকাশ পরিস্কার থাকলে এখান থেকে নাথুলা পাস ও জেলেপ লা পাসও চোখে দেখা যায়। ভোরের প্রথম সূর্যালোক যখন এই সব পাহাড়চূড়ায় এসে পড়ে যে স্বর্গীয় সৌন্দর্য তৈরি হয় প্রকৃতির ক্যানভাসে তা কথায় প্রকাশ করা কঠিন। প্রথমে লালচে রঙ থেকে ক্রমে সোনালী উজ্জ্বল রঙে সেজে উঠবে কাঞ্চনজঙ্ঘা। টিফিনদাঁড়া ছাড়া কাছেই একটি শিব-বুদ্ধ মন্দির রয়েছে সেওল গ্রামে। রিশপ থেকে দুই কিলোমিটার নীচে নামলেই এই গ্রাম পড়বে। এছাড়া বিশেষ দ্রষ্টব্য আর কিছু নেই রিশপে। সাইটসিইং করতে হলে চিরাচরিত লাভা, লোলেগাঁও আর কোলাখাম ঘুরে আসা যায় অনায়াসেই। পুরো যাত্রাপথটা রোমাঞ্চ পেতে ট্রেক করেও যেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অভ্যস্ত না হলে করা উচিত নয়। ট্রেকিং-এর সময় মাথায় রাখতে হবে পায়ে ভাল মানের জুতো আর সঙ্গে উপযুক্ত কিছু সরঞ্জাম (টর্চ, ফার্স্ট এড, স্টিক ইত্যাদি) যেন অবশ্যই থাকে। যেহেতু রিশপে কোনও দোকান-পাট নেই, তাই ক্রনিক রোগ-ব্যাধি থাকলে সঙ্গে অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণের ওষুধ রাখতে হবে। সাধারণত পর্যটকেরা লাভা-লোলেগাঁও ঘোরার সময়েই রিশপ ঘুরে যায়। এক্ষেত্রে তিন দিন সময় নিয়ে ঘুরতে এলে খুব ভাল করে সব জায়গা দেখা যায় এবং এখানকার প্রকৃতির সৌন্দর্য নিবিড়ভাবে উপভোগ করা যায়।  

বর্ষাকাল ও শীতকাল বাদে বছরের যে কোনও সময় রিশপ আসা যায়।


ট্রিপ টিপস

  • কীভাবে যাবেনট্রেনে করে আসতে হলে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে সেখান থেকে সুমো বা অন্য গাড়ি ভাড়া করে সোজা রিশপে পৌঁছানো যায়। তবে চাইলে প্রথমে নিউ মাল জংশনে নেমে সেখান থেকে গাড়িতে করে প্রথমে লাভা এবং লাভা থেকে ১২ কিমি. পথ পেরিয়ে রিশপে আসতে পারেন। সাধারণভাবে লাভা-লোলেগাঁও-রিশপ একত্রেই ঘুরতে আসেন মানুষজন, তাই দ্বিতীয় পথটিই সবথেকে সুবিধেজনক হবে। বিমানে আসতে চাইলে নিকটবর্তী বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে অথবা সরকারি বাসে ১১৭ কিমি. দূরে লাভায় নামতে হবে, তারপর সেখান থেকে একইভাবে গাড়ি করে রিশপ। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ধরেও রিশপে আসা যায়।
  • কোথায় থাকবেন – রিশপে থাকার জন্য সরকারি, বেসরকারি প্রচুর হোটেল, লজ ইত্যাদি রয়েছে। বন উন্নয়ন নিগমের নির্দিষ্ট রিসর্ট রয়েছে। হোটেলের ভাড়া মোটামুটিভাবে ৮০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া স্থানীয় শেরপা ও লেপচাদের পরিচালিত বেশ কিছু সুন্দর কটেজ রয়েছে থাকার জন্য।
  • কী দেখবেন বিশেষ দ্রষ্টব্যের মধ্যে রিশপের টিফিনদাঁড়া ভিউপয়েন্ট থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা আর নিকটবর্তী শিব-বুদ্ধ মন্দির দর্শনই একমাত্র রয়েছে। এছাড়া সাইটসিইং করতে হলে লাভা, লোলেগাঁও আর কোলাখাম ঘুরে আসা যায়।
  • কখন যাবেন – বর্ষা ও শীতকাল বাদে বছরের যে কোনও সময় আসা যায়।
  • সতর্কতা –
    • লাভা থেকে রিশপ পৌঁছানোর রাস্তা মোটেই ভাল নয়, তাই গাড়ি করে আসার সময় অসম্ভব ঝাঁকুনি লাগতে পারে। গাড়িতে সাবধানে বসাই শ্রেয়।
    • এখানে হোটেলে জলের সমস্যা রয়েছে। তাই কোনওভাবেই জল অপচয় করা উচিত নয়।
    • মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ থাকলে তা চার্জ দেবার জন্য পাওয়ার ব্যাঙ্ক জাতীয় কিছু অবশ্যই সঙ্গে রাখা দরকার, কারণ এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ খুব একটা ভাল নয়।
    • পাহাড়ে খানিক চড়াই-উতরাই হাঁটতে হতে পারে এই মানসিকতা নিয়েই এখানে আসা উচিত। যাদের হাঁটাহাঁটিতে সমস্যা তাঁরা হোটেলের চারপাশে একটু-আধটু ঘুরবেন, বেশিদূর যাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
    • রাত্রে বা সন্ধ্যার পর হোটেলের বাইরে বেরনো উচিত নয়।
    • ট্রেক করার উপযোগী সরঞ্জাম ও জুতো যেন সঙ্গে থাকে একথা মাথায় রাখতে হবে।
    • সর্বোপরি পাহাড়ের পরিবেশ কোনওভাবেই নোংরা করা যাবে না।

আপনার মতামত জানান