সেলফি মিউজিয়াম

ভারতের একমাত্র সেলফি মিউজিয়াম

হাতে স্মার্টফোন আর পিছনে কোনো সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য বা পাশে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় আর যদি কোনো সেলিব্রিটি হয় তো কথাই নেই, সেলফি তো একটা তুলতেই হবে। কোথাও ঘুরতে গিয়েছেন – সেলফি, জন্মদিনে ভালো কোনো রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছেন – সেলফি। এক কথায় সেলফি-প্রেমে মত্ত জেন ওয়াইয়ের সক্কলে। নিশ্চয়ই জানেন কোনো কোনো মিউজিয়াম, পার্ক, চিত্র-প্রদর্শনীশালা ইত্যাদিতে ছবি তোলা নিষেধ। ছবি তুলতে মন চাইলেও পারা যায় না।। কিন্তু এমন যদি হতো শুধু সেলফি তোলার জন্যেই একটা মিউজিয়াম বা প্রদর্শনীশালা গড়ে তোলা যেতো, ভাবতে ভাবতেই আনন্দে পা নেচে উঠছে হয়তো সকলের। ঠিক এই অসম্ভবটাই সম্ভব করে ফেলেছেন এক ভারতীয় চিত্রকর। খোদ ভারতের মধ্যেই চেন্নাইতে সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে তিনি গড়ে তুলেছেন একটা আস্ত সেলফি মিউজিয়াম – ভারতের একমাত্র সেলফি মিউজিয়াম (India’s only selfie museum)।

তবে শুধু যে ভারতেই এমন সেলফি মিউজিয়াম রয়েছে তা কিন্তু নয়। সমগ্র বিশ্বের মধ্যে প্রথম সেলফি মিউজিয়ামটি তৈরি হয়েছিল ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায়। শুধুমাত্র এখানকার সেলফি মিউজিয়ামটির জন্য ফিলিপিন্সকে বলা হয় ‘সেলফি ক্যাপিটাল অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ অর্থাৎ বিশ্বের সেলফি রাজধানী। ত্রিমাত্রিক ছবির সাহায্যে তৈরি এই মিউজিয়ামটিতে সর্বত্র সেলফি তোলা যায় এবং বলা ভালো এখানকার শিল্পকর্মগুলি সেলফি ছাড়া একপ্রকার অসম্পূর্ণ। দর্শকরা এখানকার ছবি বা শিল্পকর্মগুলির মধ্যে নিজে উপস্থিত হয়ে ছবি তুললেই একমাত্র ব্যাপারটা সম্পূর্ণতা পায়। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ঠিক একই পদ্ধতিতে দুবাইতেও গড়ে উঠেছে একটি সেলফি মিউজিয়াম, সেই একই ত্রিমাত্রিক ছবির সম্ভারের সাহায্যে। সাধারণভাবে দৃষ্টিবিভ্রমের কৌশলকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্নপ্রকার ‘ইন্সটলেশন আর্ট’ সাজানো থাকে এই সব সেলফি মিউজিয়ামগুলোতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই রকম বেশ কিছু সেলফি মিউজিয়ামের নাম শোনা যায়। কালার ফ্যাক্টরি, ডেসার্ট মিউজিয়াম, টোয়েন্টি নাইন রুম্‌স, মিউজিয়াম অফ আইসক্রিম, মিউজিয়াম অফ পিৎজা ইত্যাদি সেলফি-মিউজিয়ামগুলির একেকটির একেক রকম ধরন।

এইসবের মধ্যে বিশ্বের পাঁচটি বিখ্যাত সেলফি মিউজিয়াম বলতে প্রথমেই বলতে হবে মিয়ামি সেলফি মিউজিয়ামের কথা, তারপর একে একে আটলান্টা সেলফি মিউজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়ার স্ট্যাটিস মিউজিয়াম এবং ডেনভার সেলফি মিউজিয়ামের কথা বলা যায়। সাধারণত যে কোনো মিউজিয়াম অর্থকরী লাভের জন্য খোলা হয় না এবং তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে। তবে এই সেলফি মিউজিয়াম ব্যক্তিগত উদ্যোগে মূলত ব্যবসায়িক লাভের জন্যেই খোলা হয়ে থাকে। চোখকে ফাঁকি দেওয়া আশ্চর্য সব শিল্পকর্ম সাজিয়ে দেদার ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে উৎসাহিত করে এই মিউজিয়ামগুলি। ভারতও পিছিয়ে নেই এই পথে। চিত্রকর এ. পি. শ্রীতার ব্যক্তিগত উদ্যোগে চেন্নাইয়ের ইস্ট কোস্ট রোডের ধারে গড়ে তুলেছেন এরকমই একটি সেলফি মিউজিয়াম – ক্লিক আর্ট মিউজিয়াম।


সববাংলায় সাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য আজই যোগাযোগ করুন
contact@sobbanglay.com


 

চেন্নাইয়ের অন্যতম দর্শনীয় স্থানের মধ্যে একটি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ‘ক্লিক আর্ট মিউজিয়াম’ যেখানে বিশ্বের অন্যান্য সেলফি মিউজিয়ামের মতোই ত্রিমাত্রিক নানাপ্রকার শিল্পকর্ম সাজানো রয়েছে। এগুলিকে বলা হয় ‘ইন্টার‍্যাক্টিভ আর্ট’ বা প্রতিক্রিয়ামূলক শিল্প। অর্থাৎ এই শিল্পকর্মগুলির সঙ্গে দর্শক মিলিত না হলে শিল্পকর্মগুলির উৎকর্ষতা বোঝা যায় না। দ্বিমাত্রিক দেওয়ালের মধ্যেই এমন অনবদ্য মুন্সিয়ানায় ত্রিমাত্রিক ছবি এঁকেছেন শ্রীতার যে সকলের চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ্য। এই বিশেষ প্রকারের দৃশ্যশিল্পের কৌশল প্রথম তৈরি হয় সপ্তদশ শতকের ফ্রান্সে। ফরাসি ভাষায় একে বলা হয় ‘টোম্পে-ই-ওয়েইল’ যার অর্থ হল চোখকে ফাঁকি দেওয়া। ফ্রান্সের পরে রোমেও এই বিশেষ কৌশলের শিল্পকর্ম খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। ভারতের বুকে একমাত্র সেলফি মিউজিয়ামেও দেখা যাবে এই ধরনের শিল্পকর্ম। এ. পি. শ্রীতার এখানে মোট চব্বিশটি ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করেছেন, সবই মিউজিয়ামের দেওয়ালেই আঁকা। তবে কীভাবে ছবি তোলা যাবে সেই ধারণাও দেওয়া হয়েছে এই মিউজিয়ামে, প্রত্যেকটি ছবির নীচে মাটিতে বিশেষভাবে পায়ের চিহ্ন দেওয়া আছে, ঠিক ওভাবেই চিহ্নের সঙ্গে মিলিয়ে পা রেখে দাঁড়ালে একেবারে বাস্তব ছবির মতো প্রভাব বোঝা যাবে ক্যামেরায়। এক সাক্ষাৎকারে শিল্পী শ্রীতার জানাচ্ছেন এই মিউজিয়াম তৈরি করার আগে সিঙ্গাপুরের সেন্টোসিয়া মিউজিয়ামে গিয়েছিলেন তিনি আর সেখানেই এমন অদ্ভুত, আশ্চর্য ত্রিমাত্রিক শিল্পের প্রদর্শনী দেখে ভারতের বুকে এইরকম মিউজিয়াম গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। শুনলে চমকে যেতে হয়, এখনও পর্যন্ত ক্লিক আর্ট মিউজিয়ামে প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ লাখ ছবি তোলা হয়েছে। প্রতিটি ছবির একটা নিজস্ব স্পেস আছে এখানে। ছবি তুলতে গেলে ছবির সেই স্পেসের মধ্যে অংশ নিতে হবে দর্শককে, এটাই এইরকম ত্রিমাত্রিক মিউজিয়ামের মজা। কখনো শিম্পাঞ্জির সঙ্গে সেলফি, কখনো মোনালিসার সঙ্গে, কখনো আবার ডলফিনের সঙ্গে বল খেলতে খেলতে সেলফি, উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের মধ্যে স্কেটবোর্ডে ব্যালান্সিং করতে করতেও ছবি তুলে নেওয়া যায় এখানে। চার্লি চ্যাপলিনকে গোলাপ ফুল দেওয়া বা কুমিরের মুখে মাথা রাখা এমন সব মজার অভিজ্ঞতার স্বাদ নেওয়া যায় একটা ক্লিকেই।

ভারতের মধ্যে চেন্নাইতে প্রথম ক্লিক আর্ট মিউজিয়াম চালু হলেও পরে এ. পি. শ্রীতার ব্যাঙ্গালোর, দিল্লি এবং মুম্বাইতেও একইরকম মিউজিয়াম চালু করেছেন। পা রেখেছেন ভারতের বাইরেও। শ্রীতারের ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ায় এইরকম ত্রিমাত্রিক সেলফি মিউজিয়াম চালু হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির যুগে এই ত্রিমাত্রিক মিউজিয়ামের মধ্য দিয়ে চিত্রশিল্পকে একইসঙ্গে জনপ্রিয়তার এক অন্যমাত্রায় উন্নীত করেছেন এ. পি. শ্রীতার।

আপনার মতামত জানান