জিউসেপ গ্যারিবল্ডি

জিউসেপ গ্যারিবল্ডি

ইতালির একজন সামরিক নেতা, দেশপ্রেমিক এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী জিউসেপ গ্যারিবল্ডি (Giuseppe Garibaldi) উজ্জ্বল এক জ্যোতিষ্ক। ইতালির একীকরণের লড়াইয়ের একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি তাঁকে আধুনিক ইতালির অন্যতম নির্মাতা হিসেবেও বিবেচনা করেছিলেন। কাউন্ট কাভ্যুরকে ‘একীকরণের মস্তিষ্ক’, ম্যাৎসিনিকে ‘আত্মা’ এবং কে তাঁর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের জন্য ‘একীকরণের তরোয়াল’ বলে মনে করা হয়। এছাড়াও লাতিন আমেরিকা, ইতালি এবং পরবর্তীকালে ফ্রান্সের স্বাধীনতার পক্ষে তাঁর যুদ্ধের জন্য অনেকেকে দুই বিশ্বের নায়ক বলেও অভিহিত করে থাকেন। ইতালির ইতিহাসের একজন কিংবদন্তিতে পরিণত হওয়া মহান যোদ্ধা গ্যারিবল্ডি নির্মাণ করেছিলেন ‘রেড শার্ট’ বাহিনী। রোমান প্রজাতন্ত্রের জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছিলেন তিনি। অসংখ্য যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধ, রাগামাফিন যুদ্ধ, উরুগুয়ের গৃহযুদ্ধ ইত্যাদি। ফ্রেডরিক এঙ্গেলস, চে গুয়েভারার মতো বিশ্ববিখ্যাত মানুষেরা প্রশংসা করেছিলেন গ্যারিবল্ডির।

১৮০৭ সালের ৪ জুলাই ফরাসি প্রথম প্রজাতন্ত্র দ্বারা বিজিত ফ্রান্সের নিস শহরে একটি লিগুরিয়ান পরিবারে জিউসেপ গ্যারিবল্ডি র জন্ম হয়। তাঁর বাবা সামুদ্রিক ক্যাপ্টেন গিয়োভনি ডোমেনিকো গ্যারিবল্ডি (Giovanni Domenico Garibaldi) উপকূলীয় বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জিউসেপ গ্যারিবল্ডি র মায়ের নাম মারিয়া রোসা নিকোলেত্তা রাইমোণ্ডি (Maria Rosa Nicoletta Raimondi)। যেহেতু তাঁর পরিবারের সঙ্গে সমুদ্রের এত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ, গ্যারিবল্ডি নিজেও প্রায় ১০ বছর একজন নাবিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। ১৮৩২ সালে একজন বণিক হিসেবে মাস্টার্স সার্টিফিকেটও অর্জন করেন এবং মার্চেন্ট নেভি ক্যাপ্টেন হয়ে ওঠেন। সেসময় কৃষ্ণসাগর, ভূমধ্যসাগরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি৷ ১৮৩৩ সালের এপ্রিল মাসে তিনি রাশিয়ান সাম্রাজ্যের তাগানরোগে ঘুরছিলেন জাহাজ বোঝাই কমলালেবু নিয়ে। বন্দরে দশদিন থাকার সময় ম্যাৎসিনির তৈরি ‘তরুণ ইতালি’ দলের সদস্য এবং সক্রিয় রাজনীতিবিদ জিওভানি বাতিস্তা কুনিওর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে উদার প্রজাতন্ত্র হিসেবে ইতালির একীকরণের যে পরিকল্পনা তাতে গ্যারিবল্ডি অংশ নেন এবং অস্ট্রিয়ান আধিপত্য থেকে স্বদেশকে মুক্ত ও একীভূত করার সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ১৮৩৩ সালে জেনোয়াতে ম্যাৎসিনির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় গ্যারিবল্ডির। ম্যাৎসিনির সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ বিষয়ক কথাবার্তা ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল গ্যারিবল্ডিকে। তিনি কার্বোনারি বিপ্লবী সমিতিতে যোগদান করেন এবং ১৮৩৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিডমেন্টে প্রজাতন্ত্রী বিপ্লবকে উসকে দেওয়ার জন্য সংগঠিত একটি ম্যাৎসিনিয়ান বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিলেন যা ব্যর্থ হয়। ফলে গ্যারিবল্ডি পালিয়ে যান এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। গোপনে মার্সেইতে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ইতালিতে ফিরতে না পেরে শেষমেশ দক্ষিণ আমেরিকায় চলে যান গ্যারিবল্ডি।

গ্যারিবল্ডি প্রথমে তিউনিসের বেইলিকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং শেষে ব্রাজিলে যাওয়ার পথ পান ও রিও ডি জেনিরোতে পৌঁছান। সেখানে রাগামুফিন নামে পরিচিত বিদ্রোহীদের সঙ্গে ১৮৩৫ সালের রিও গ্রাণ্ডে দো সুল প্রদেশের রাগামুফিন যুদ্ধে যোগ দেন এবং নৌবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব সামলান। এই যুদ্ধের সময় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল আঠারো বছর বয়সী আনা মারিয়া ডি জেসুস রিবেইরো দা সিলভারের (Ana Maria de Jesus Ribeiro da Silva), যিনি সাধারণত ‘অ্যানিটা’ (Anita) নামে পরিচিত ছিলেন। ১৮৩৯ সালে বিদ্রোহীরা সান্তা ক্যাটারিনা প্রদেশে ক্যাটারিনেন্স রিপাবলিক ঘোষণা করলে অ্যানিটা গ্যারিবল্ডির রিও পারডো জাহাজে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন এবং ইমবিতুবা ও লেগুনার যুদ্ধে গ্যারিবল্ডির পাশে থাকেন। এই যুদ্ধের সময় গ্যারিবল্ডি কারাবন্দী হয়েছিলেন এবং অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে হয় তাঁকে। ১৮৪১ সালে গ্যারিবল্ডি  এবং অ্যানিটা উরুগুয়ের মন্টেভিডিওতে চলে যান। সেখানে একজন ব্যবসায়ী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন গ্যারিবল্ডি। সেবছরই মন্টেভিডিওতে তাঁরা বিবাহ করেন। এই দম্পতির চার সন্তান হলেন ডোমেনিকো মেনোত্তি, রোসা, টেরেসা টেরেসিটা এবং রিসিওটি।

১৮৪২ সালে মুক্তিযুদ্ধে উরুগুয়ের নৌবাহিনীর দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্যারিবল্ডিকে। এইবার আর্জেন্টিনার একনায়ক হুয়ান ম্যানুয়েল ডি রোসাসের বিরুদ্ধে লড়াই। মন্টেভিডিওতে তখন ইতালিয়ান মানুষের সংখ্যা ছিল অনেক। সে কারণেই উরুগুয়ের এই গৃহযুদ্ধের সময় সেখানে এক ইতালীয় সৈন্যদল তৈরি করে তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গ্যারিবল্ডি। এই সৈন্যদলই বিখ্যাত ‘রেডশার্ট’ নামে পরিচিত। ১৮৪২ থেকে ১৮৪৮ সালের মধ্যে গ্যারিবল্ডি ও রিবের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিরুদ্ধে মন্টেভিডিওকে রক্ষা করেছিলেন। ১৮৪৫ সালে তিনি কলোনিয়া দেল স্যাক্রামেন্টো এবং মার্টিন গার্সিয়া দ্বীপ দখল করতে সক্ষম হন। বিখ্যাত গেরিলা যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করে গ্যারিবল্ডি সেরোর যুদ্ধ এবং সান আন্তোনিও দেল সান্তোর যুদ্ধে জয়লাভ করেন। এই জয় গোটা ইউরোপে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে দিয়েছিল এবং ইতালিতে একটি সম্মানীয় তলোয়ার তাঁকে প্রদান করা হয়েছিল এই কৃতিত্বের জন্য। ১৮৪৭ সালে খুব অল্প সময়ের জন্য মন্টেভিডিওর প্রতিরক্ষার দায়িত্ব সামলেছিলেন।

১৮৪৬ সালে পোপ পিয়াস নবমের নির্বাচন ইতালিয়ান দেশপ্রেমিকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। ১৮৪৮ সালে পালেরমোতে বিপ্লবের প্রাদুর্ভাব এবং ইতালির অন্যত্র বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের খবর গ্যারিবল্ডিকে স্থির থাকতে দেয়নি। অস্ট্রিয়ানদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে ইতালির পুনরুত্থানের লড়াইয়ের জন্য নিজের ৬০ জন সদস্যের বাহিনী নিয়ে ইতালি ফিরে যান তিনি। প্রথমে পোপ পিয়াসের হয়ে লড়াইয়ের প্রস্তাব দিয়েও প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার রাজা চার্লস অ্যালবার্টকে সাহায্যের প্রস্তাব দেন গ্যারিবল্ডি। কিন্তু চার্লস তাঁর সঙ্গে অবিশ্বাসীর মতো আচরণ করেন। পিডমন্টিজদের দ্বারা প্রত্যাখাত হয়ে গ্যারিবল্ডি এবং তাঁর অনুসারীরা লোমবার্ডিতে প্রবেশ করেন। সেখানে মিলান শহরের অস্থায়ী সরকারকে সাহায্যের জন্য যান যারা অস্ট্রিয়া দখলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। গ্যারিবল্ডির নেতৃত্বে তাঁর বাহিনী লুইনো এবং মোরাজজোনে দুটি লড়াইতে জয়লাভ করে।
১৮৪৯ সালের ২৩ মার্চ নোভারার যুদ্ধে পিডমন্টিজদের পরাজয়ের পর গ্যারিবল্ডি প্যাপাল রাজ্যে ঘোষিত রোমান প্রজাতন্ত্রকে সমর্থনের জন্য রোমে চলে যান। লুই নেপোলিয়ন কর্তৃক প্রেরিত ফরাসি বাহিনী এই রাজ্যের পতনের হুমকি দেয়। ম্যাৎসিনির অনুরোধে তখন রোমের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেন গ্যারিবল্ডি। ১৮৪৯ সালের ৩০ এপ্রিল গ্যারিবল্ডির নেতৃত্বে রিপাবলিকান বাহিনী সংখ্যায় অনেক বেশি ফরাসী সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে। কিন্তু ফরাসি সেনা শক্তিবৃদ্ধি করে পুনরায় ফেরে এবং রোম অবরোধ করে। রিপাবলিকান সেনার প্রতিরোধ সত্ত্বেও ২৯ জুন ফরাসিরা জয়লাভ করে। জুলাই মাসের শুরুর দিকে চার হাজার সৈন্য নিয়ে রোম প্রত্যাহার করেন গ্যারিবল্ডি। তিনি বাহিনীসমেত ভেনিসে পৌঁছনোর জন্য উত্তরদিকে পালিয়ে যান। ভেনিসিয়ানরা তখনও অস্ট্রিয়ান অবরোধকে প্রতিরোধ করছিল। এই পশ্চাদপসারণকালে কমাকচিওর কাছে অ্যানিটার মৃত্যু হয়েছিল।

অবশেষে পালিয়ে গিয়ে ১৮৫০ সাল নাগাদ গ্যারিবল্ডি নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা হন এবং সেখানে আন্তোনিও মেউচ্চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কিছু সময়ের জন্য স্ট্যাটেন দ্বীপে মোমবাতি প্রস্তুতকারক হিসেবে কাজ করেছিলেন গ্যারিবল্ডি। পেরুর লিমাতে এক স্থানীয় ইতালীয় বণিক পিয়েত্রো ডেনেগ্রি তাঁকে প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে বাণিজ্যের জন্য ‘দ্য কারমেন’ নামক এক জাহাজের কমাণ্ডের দায়িত্ব দিয়ে দেন। পেরুতে আন্দিয়ান বিপ্লবী নায়িকা ম্যানুয়েলা সেঞ্জের সঙ্গে দেখা করেন গ্যারিবল্ডি।

ফিগারি এবং গ্যারিবল্ডির কেনা ‘কমনওয়েলথ’ নামক জাহাজে করে ১৮৫৩ সালের নভেম্বরে নিউইয়র্ক ছেড়ে লণ্ডনের দিকে এবং পরে উত্তর-পূর্ব ইংল্যাণ্ডের টাইন নদীর মুখে যাত্রা করেন। টাইনসাইডের স্থানীয় শ্রমজীবী মানুষ তাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। নিউক্যাসেল কোরান্টের রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি নিউ ক্যাসেলের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে খাবারের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁকে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে এক খোদাই করা তলোয়ার দিয়েছিল। ১৮৫৪ সালের এপ্রিল মাস নাগাদ টাইনসাইড থেকে তিনি প্রস্থান করেন এবং জেনোয়ায় যান যেখানে ১৮৫৪ সালের ১০ মে পাঁচ বছরের নির্বাসন জীবন শেষ হয় গ্যারিবল্ডির।

১৮৫৪ সালে পুনরায় ইতালিতে ফেরেন গ্যারিবল্ডি এবং সার্ডিনিয়ার উত্তরে অবস্থিত ইতালীয় দ্বীপ ক্যাপ্রেরার অর্ধেক কিনে নিজেকে কৃষিকাজে নিয়োজিত করেন। ১৮৫৬ সালে তিনি নেপলসের বোরবন রাজাদের দ্বারা বন্দি রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির জন্য একটি অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যদিও তা ব্যর্থ হয়। ১৮৫৯ সালে দ্বিতীয় ইতালীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ (যেটি অস্ট্রো-সার্ডিনিয়ান যুদ্ধ নামেও পরিচিত) শুরু হয়। গ্যারিবল্ডি তখন মেজর জেনারেল নিযুক্ত হন এবং একটি স্বেচ্ছাসেবক ইউনিট গঠন করেন যার নাম ‘হান্টারস অফ দ্য আল্পস’।  তখন ম্যাৎসিনির প্রজাতান্ত্রিক আদর্শ ছেড়ে অনুমান করেন যে, একমাত্র পিডমন্টিস রাজতন্ত্রই ইতালির মুক্তি ঘটাতে পারবে। গ্যারিবল্ডি এবং তাঁর বাহিনী ভারেসে, কোমো ইত্যাদি জায়গায় অস্ট্রিয়ানদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিল। গ্যারিবল্ডি ক্যাভুরের প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট ছিলেন কারণ ক্যাভুরের নির্দেশেই তাঁর নিজের শহর নিস সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ফরাসিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।

১৮৬০ সালের ২৪ জানুয়ারি গ্যারিবল্ডি ১৮ বছর বয়সী জিউসেপিনা রাইমন্ডিকে (Giuseppina Raimondi) বিবাহ করেছিলেন। বিবাহের অনুষ্ঠানের পরেই যখন জিউসেপিনা জানান যে তিনি অন্য পুরুষের সন্তান ধারণ করে আছেন নিজের গর্ভে, গ্যারিবল্ডি সেদিনই তাকে ছেড়ে চলে যান। এরপর তিনি ফ্রান্সেসকো আরমোসিনোকে (Francesca Armosino) বিবাহ করেন। তাঁদের তিন সন্তান যথাক্রমে স্লেলিয়া গ্যারিবল্ডি, রোসা গ্যারিবল্ডি এবং ম্যানলিও গ্যারিবল্ডি।

১৮৬০ সালে সিসিলি এবং নেপলস বিজয় গ্যারিবল্ডির অন্যতম সেরা কৃতিত্বগুলির একটি। ১৮৬০ সালের এপ্রিলে মেসিনা এবং পালের্মোতে গণজাগরণ শুরু হয়। গ্যারিবল্ডি তখন হাজার সৈন্য জড়ো করেন যারা মূলত ‘আই মিল্লে’ বা ‘রেডশার্ট’ নামেই পরিচিত ছিলেন। তাঁর বাহিনী এবং স্থানীয় কৃষক, বিদ্রোহীরা একজোটে ১৩ মে ক্যালাটাফিমিতে তিন হাজার শক্তিশালী বোরবন ফরাসি গ্যারিসনকে পরাস্ত করে। পরের দিন ভিক্টর ইমানুয়েল দ্বিতীয়ের নামে নিজেকে সিসিলির একনায়ক ঘোষণা করেন তিনি। এরপর পালেরমোতে ২৭ মে অবরোধ করেন। ৭ সেপ্টেম্বর নেপলস শহরে প্রবেশ করেন তিনি। ৩০ সেপ্টেম্বর ভলটার্নোর যুদ্ধে নেপোলিয়ন সৈন্যদের পরাস্ত করতে পারেননি গ্যারিবল্ডিরা। তবে এর ফলাফল পিডমন্টিজের সেনা সেখানে অবতরণ করার পর বোঝা গিয়েছিল।

১৮৬০ সালের ২৬ অক্টোবর ভিক্টর ইমানুয়েল দ্বিতীয়ের সঙ্গে গ্যারিবল্ডির বিখ্যাত সাক্ষাতে গ্যারিবল্ডি তাঁকে ইতালির রাজা হিসেবে অভিবাদন জানান। ইতালির একীকরণকে এই সিদ্ধান্ত খানিকটা ত্বরান্বিত করেছিল। ১৮৬১ সালে আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময় গ্যারিবল্ডি জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সেই বছর ২৭ জুলাই উইলিয়াম এইচ সেওয়ার্ডের এক চিঠিতে মার্কিন সেনাবাহিনীতে গ্যারিবল্ডিকে মেজর জেনারেলের কমিশনের জন্য প্রস্তাব করা হয়। ১৮৬১ সালের ৫ অক্টোবর ফরাসি, পোল, সুইস, জার্মানসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের জাতীয় বিভাগকে একত্রিত করে আন্তর্জাতিক সৈন্যদল গঠন করেন গ্যারিবল্ডি যা কেবল ইতালির মুক্তি নয়, সেই দেশগুলির মুক্তির লক্ষ্যেও।

গ্যারিবল্ডি পোপের হাত থেকে রোমকে মুক্ত করে ইতালির রাজধানীতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। রোম আক্রমণের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ভীত ভিক্টর ইমানুয়েল পোপের বিরুদ্ধে অভিযানে বিপ্লবীদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেন। ১৮৬২ সালের জুন মাসে ‘রোমা ও মর্তে’ স্লেগান দিয়ে তিনি জেনেয়া থেকে পালেরমো যাত্রা করেন। ১৮৬৬ সালে পুনরায় অস্ত্রধারণ করেন। তখন অস্ট্রো-প্রুশিয়ান যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং ইতালি অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রুশিয়ার সঙ্গে জোট বেঁধেছিল অস্ট্রিয়ান শাসন থেকে ভেনেশিয়া কেড়ে নেওয়ার আশায়। এই লড়াইটিই ছিল ইতালির তৃতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। ১৮৬৭ সালে তিনি পুনরায় বাহিনী নিয়ে পাপাল রাজ্যে অভিযান চালিয়ে রোম পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন কিন্তু মেন্টানার যুদ্ধে আহত হন। ১৮৭০-৭১ সালে ফরাসি প্রজাতন্ত্রের পক্ষে প্রুশিয়ার বিরুদ্ধে এক অভিযানের নেতৃত্ব দেন তিনি। ফরাসি জাতীয় পরিষদের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন পরবর্তীতে। ১৮৭৯ সালে গ্যারিবল্ডি “লিগ অফ ডেমোক্রেসি” প্রতিষ্ঠা করেন যা সর্বজনীন ভোটাধিকার, নারীমুক্তি, ধর্মীয় সম্পত্তির বিলোপ এবং জাতীয় ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করে। তাঁর লেখা দুটি উপন্যাস হল ‘ক্লেলিয়া’ এবং ‘ক্যান্টোনি ইল ভলোন্টারিও’। এছাড়াও আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথাও লিখেছেন।

দীর্ঘদিন বাতরোগে ভুগে ১৮৮২ সালের ২ জুন ৭৫ বছর বয়সে ক্যাপ্রেরা দ্বীপে জিউসেপ গ্যারিবল্ডির মৃত্যু হয়।

2 comments

আপনার মতামত জানান