নেতাজীর মৃত্যু

নেতাজীর মৃত্যু রহস্য

নেতাজীর মৃত্যু  সর্বদাই একটা বিতর্ক। তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারে কয়েকটি প্রচলিত মত আছে। প্রথমটি সবচেয়ে প্রচলিত। ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট মঞ্চুরিয়া যাওয়ার পথে তাইহোকুতে একটি বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু হয়েছিল বলে সরকারি দলিল-দস্তাবেজে বলা আছে।যদিও এর যথেষ্ট বিরোধিতাও আছে। বর্তমানে রেনকোজি মন্দিরে রাখা নেতাজীর চিতাভষ্ম পরীক্ষা করে জানা গেছে, ওই চিতাভস্ম নাকি নেতাজীর নয়।

নেতাজীর মৃত্যু

বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষের মৃত্যুর সত্যতা যাচাই করতে একাধিক তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে। যার মধ্যে শাহনওয়াজ কমিশন, খোসলা কমিশন এবং মুখার্জি কমিশন উল্লেখযোগ্য। প্রথম দুটি কমিশন ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পক্ষেই মতামত দিয়েছে। বিচারপতি মনোজ মুখার্জীর নেতৃত্বাধীন কমিশন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছিল। তাইহোকু বিমানবন্দরের সব নথি খতিয়ে দেখে তারা মতামত দেয় যে ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট সেখানে কোনও বিমান দুর্ঘটনাই ঘটে নি। যদিও, কোনো কারণ না দেখিয়েই এই তদন্ত রিপোর্ট বাতিল করে দেয় সরকার। একমাত্র মুখার্জী কমিশন বলেছিল, নেতাজীর মৃত্যুর প্রমাণস্বরূপ কোন ডেথ সার্টিফিকেট নেই। এমনকি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হননি বলে জানিয়েছেন নেতাজীর গাড়িচালকও।তার দাবী যে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজী নিহত হয়েছেন বলে ব্যাপকভাবে প্রচলিত, সে ঘটনার চার মাস পর তিনি নেতাজীকে মায়ানমার ও থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফৌজের একজন সদস্য বলে দাবি করেছেন।

নেতাজীর মৃত্যু

নেতাজী যদি জীবিত থাকেন, তাহলে কোথায় গিয়েছিলেন তিনি? অনেকে বলেন, নেতাজী সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে বন্দী অবস্থায় ছিলেন। রাশিয়াতে যাওয়ার পর তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল সে ব্যাপারে তারা আবার ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন।

কারো কারো দাবি, সুভাষ গিয়েছিলেন রাশিয়াতে। রাশিয়ান সৈন্যরা তাঁকে গ্রেফতার করে এবং সেখানকার কারাগারে তিনি তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কেউ বলেন তাঁর মৃত্যু হয় সার্বিয়াতে। বোস: দ্য ইন্ডিয়ান সামুরাই- নেতাজী ও আইএনএ সামরিক পরিসংখ্যান – বইটিতেও নেতাজীর রাশিয়ায় যাওয়ার উল্লেখ আছে। এই বইটি ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জি. ডি. বকশি বইয়ে সাফ বলে দিয়েছিলেন, বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যু হয়নি। বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তত্ত্বটি জাপানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির দ্বারা ছড়িয়ে পড়েছিল যাতে নেতাজী পালিয়ে যেতে পারেন। টোকিওতে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতের সহায়তায় বোস এই পরিকল্পনাটি করেছিলেন। যখন বসু জাপান থেকে পালিয়ে যান, তখন তিনি সার্বিয়া থেকে তিনটি রেডিও সিরিয়াল সম্প্রচার করেন। সেই সময়ে ব্রিটিশরা জানত যে বসু জীবিত ছিলেন। তার বেঁচে থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে, ব্রিটিশ সরকার সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকারের কাছে সুভাষকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানায়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় বসুকে এতটাই নির্যাতন করা হয় যে তিনি মারা যান। যদিও, এই বক্তব্যকে অনেকেই প্রত্যাখ্যান করেন।

নেতাজীর মৃত্যু

১৯৬৬ সালে ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী উজবেকিস্তানের তাসখন্দে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানের সাথে তাসখন্দ চুক্তি করার পরই রহস্যজনক ভাবে তার মৃত্যু হয়। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।অথচ তাঁর চিকিৎসক আর. এন. চুং দাবি করেন, ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী একদম ফিট ছিলেন। ওই বৈঠকের কিছু ছবিতে এমন এক ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যার চেহারা অবিকল সুভাসচন্দ্রের সাথে মিলে যায়। অনেক ফরেনসিক এক্সপার্টরাও ওই ব্যক্তিকে সুভাষ বলে দাবি করেছিলেন।

সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুর ব্যাপারে তৃতীয় মতটি হল ফয়জাবাদের ‘ভগবানজি’ ওরফে গুমনামি বাবাই হলেন নেতাজী। ১৯৮৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। চেহারায় কিছুটা মিল আছে বটে, তবে এমন দাবীর পক্ষে কোনো অকাট্য প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তথ্যসূত্র


  1. নেতা থেকে নেতাজি, লেখকঃ অমলেশ ত্রিপাঠী, প্রকাশনাঃ বিপ্লবীদের কথা।
  2. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, লেখকঃপূরবী রায়, প্রকাশনাঃএশিয়ান পাবলিকেশন
  3. Netaji: A Pictorial Biography by Dr. Sisirkumar Bosu and Brirendra Nath Singh, Ananda Publishers.
  4. https://www.indiatoday.in/india/story/netaji-subhas-chandra-bose-gumnami-baba-probe-report-inconclusive

3 comments

  1. অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং আজও
    বিতর্কমূলক বিষয় এটি। তাই শিরোনামে “মৃত্যুরহস্য” কথাটি ব্যবহার করাই সঙ্গত হতো।
    যাই হোক, এই বিষয়ে একটি অত্যন্ত ভালো এবং সাম্প্রতিক গ্ৰন্থের নামের উল্লেখ না থাকায় বিস্মিত বোধ করলাম। সেটি হলো: Netaji Subhash Chandra Bose: Feared Even In Captivity”। লেখক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, নেতাজীর মৃত্যু সোভিয়েত রাশিয়ায় বন্দী অবস্থায়ই ঘটেছে। গবেষক-লেখকের মতামতের স্বাধীনতা আছেই।

আপনার মতামত জানান