বারুচ স্পিনোজা

বারুচ স্পিনোজা

দর্শনশাস্ত্রের ইতিহাস যে সমস্ত উচ্চমেধা ও মননশীল চিন্তাবিদ এবং দার্শনিকদের অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ওলন্দাজ দার্শনিক বারুচ স্পিনোজা (Baruch Spinoza)। সপ্তদশ শতাব্দীতে আবির্ভূত দার্শনিকদের মধ্যে আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক স্পিনোজার দর্শন-চিন্তা। তিনি এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকপ্রাপ্ত নবযুগের প্রাথমিক এবং মূল প্রবক্তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একজন৷ দেকার্ত এবং লাইবনিজের পাশাপাশি যুক্তিবাদের একজন অন্যতম প্রবর্তক ছিলেন তিনিও। দর্শনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় তাঁর কাজগুলিকে শ্রেণিবদ্ধ করা কঠিন হয়ে পড়ে কখনও কখনও। জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম হিসেবে ইন্দ্রিয় উপলব্ধির অবমূল্যায়ন, জ্ঞানের সম্পূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক রূপের বর্ণনা এবং দর্শনের মডেল হিসেবে জ্যামিতির আদর্শীকরণ, এভাবে তাঁর কাজের শ্রেণিকরণ করা চলে। বারুচ স্পিনোজা দেকার্তের দেহ-মন দ্বৈতবাদের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন দৈবক্রমে ঘটে না কিছুই। তাঁর মতে, প্রকৃতির সমস্ত জিনিস নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা থেকেই বিরাজ করে। ভাল ও মন্দকেও তিনি আপেক্ষিক বলে মনে করতেন। স্পিনোজাকে তাঁর নীতিশাস্ত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি স্মরণ করা হয়। অদ্বৈতবাদী অধিবিদ্যা থেকে একটি নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন তিনি যেখানে প্রকৃতি ও ঈশ্বরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। হিব্রু বাইবেলের সত্যতা ও ঐশ্বরিক প্রকৃতি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্যের জন্য তাঁকে সমাজ থেকে বহিষ্কার করাও হয়েছিল। স্পিনোজার উল্লেখযোগ্য একটি দর্শনগ্রন্থ হল ‘দ্য এথিক্স’৷

১৬৩২ সালের ২৪ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের অন্তর্গত জোডেনবুর্টে বারুচ স্পিনোজার জন্ম হয়। তাঁর বাবা মিগুয়েল ডি স্পিনোজা ( Miguel de Espinoza) খুব ধনী বা অভিজাত শ্রেণির মানুষ ছিলেন না। একজন সফল পর্তুগিজ সেফার্ডিক ইহুদি বণিক ছিলেন মিগুয়েল। স্পিনোজার মা আনা ডেবোরা (Ana Débora) ছিলেন মিগুয়েলের দ্বিতীয় পত্নী। তাঁর পরিবার ধর্মীয় নিপীড়নের ফলে পর্তুগাল থেকে পালিয়ে এসেছিল আমস্টারডামে৷ মাতৃভাষা পর্তুগিজ হলেও স্প্যানিশ-পর্তুগিজ-ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে বেড়ে ওঠেন স্পিনোজা। ফলে হিব্রু, স্প্যানিশ ছাড়াও ডাচ, ফরাসি এমনকি লাতিন ভাষাও জানতেন তিনি। স্পিনোজার মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। মূলত এক ঐতিহ্যবাহী ইহুদি পরিবেশেই শৈশব এবং কৈশোর কেটেছিল তাঁর।

প্রাথমিক শিক্ষালাভের জন্য স্পিনোজাকে একটি ইহুদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমস্টারডামের তালমুদ তোরাহমণ্ডলীর কেটার তোরাহ ইয়েশিভাতে ভর্তি করা হয়। সেই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে ছিলেন রাব্বি শৌল লেভি মর্তেরা। সেখানে বারুচ স্পিনোজা মানসেহ বেন ইস্রায়েলের মতো প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষকের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। ভীষণ মেধাবী একজন ছাত্র ছিলেন তিনি৷ সেখানে তিনি হিব্রু শেখেন ও ধর্মগ্রন্থও অধ্যয়ন করেন। তাঁর ভিতরে ভবিষ্যতের রাব্বি হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা গিয়েছিল, এতই মেধার উজ্জ্বলতা ছিল স্পিনোজার। অবশ্য এরপরে আরও উচ্চ শ্রেণিতে যোগ দিতে পারেননি তিনি, কারণ তাঁর ১৭ বছর বয়সে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর দাদার আকস্মিক মৃত্যু ঘটলে ১৬৫০ সালে পারিবারিক ব্যবসায় নামতে বাধ্য হন তিনি। ফলত তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সেখানেই বন্ধ হয়ে যায়। সেই ব্যবসায় যোগদান করে বৈচিত্র্যময় চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হতে থাকেন স্পিনোজা। মুক্তচিন্তার অধিকারী প্রোটেস্ট্যান্টদের সংস্পর্শে আসেন তিনি।


সববাংলায় সাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য আজই যোগাযোগ করুন
contact@sobbanglay.com


 

১৬৫৩ সালে ফ্রান্সেস ভ্যান ডেন এন্ডেনের সঙ্গে বারুচ স্পিনোজা লাতিন অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন। তবে এই সূচনার সাল-তারিখ নিয়ে দ্বিধা রয়েছে পণ্ডিতদের মধ্যে। কেউ বলেন যখন ১৬৫৪-১৬৫৫ সাল, আবার কেউ কেউ ১৬৫৭-৫৮ সালের কথা বলেন। এই ভ্যান ডেন ছিলেন কুখ্যাত চিন্তাবিদ এবং প্রাক্তন জেসুইট ও র‍্যাডিকাল ডেমোক্র্যাট। তিনি স্পিনোজাকে দেকার্তের দর্শনসহ বিভিন্ন আধুনিক দর্শনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। ভ্যান ডেনের প্রতিষ্ঠিত স্কুলে শিক্ষকতাও করেছিলেন বারুচ স্পিনোজা।

১৬৫৪ সালে স্পিনোজার বাবার মৃত্যু হয় এবং তিনি এগারো মাস কাদ্দিশ বা ইহুদি শোকের প্রার্থনা পাঠ করেন। তাঁর বড় বোন রেবেকা সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করে এসময়। আদালতে মামলা হয় এবং স্পিনোজা সেই মামলায় জয়লাভ করেন। যদিও রেবেকার নামেই সম্পত্তির উত্তরাধিকার বরাদ্দ করবার জন্য আদালতের কাছে আর্জি জানান তিনি। এসময় খুব অল্পদিন স্পিনোজা পারিবারিক আমদানির ব্যবসা পরিচালনার কাজ করেছিলেন। কিন্তু প্রথম অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের সময় এই ব্যবসা ভীষণভাবে আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছিল। তখন পাওনাদারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজেকে অনাথ ঘোষণা করে ব্যবসার দায়িত্ব থেকে সরে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু মায়ের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন বলেই তাঁর আর্থিক সমস্যার অনেকাংশে সমাধান হয়েছিল এবং সেকারণেই নিশ্চিন্তে দর্শনচিন্তার দিকে তিনি মনোনিবেশ করতে পেরেছিলেন।

প্রগতিশীল ও মুক্তচিন্তার অধিকারী ভ্যান ডেনের প্রভাবে স্পিনোজার মধ্যে প্রথাবিরোধী এক মন তৈরি হয়ে উঠতে থাকে। প্রথাগত ধর্মীয় রীতি-নীতির সমালোচনা, হিব্রু বাইবেলের সত্যতা বিষয়ে সংশয় উত্থাপন, প্রকাশ্যে আত্মার অমরত্বকে অস্বীকার যা কিনা তাঁর দর্শনেরও ভিত্তি হবে পরবর্তীকালে, এছাড়াও ঈশ্বরের ধারণাকে প্রত্যাখান ইত্যাদি কারণে ১৬৫৬ সালে তালমুদ তোরাহমণ্ডলী একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্পিনোজাকে ধর্মসভা থেকে বহিষ্কার করে৷ সেই নিষেধাজ্ঞায় জঘন্য ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তাঁকে। তিনি প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ ইহুদি হিসেবেও বিবেচিত হয়েছিলেন। অনেকের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার পরে ভ্যান ডেন এন্ডেনের স্কুলে শিক্ষকতা করেন স্পিনোজা। অবশেষে আমস্টারডাম থেকে তাঁকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। নির্বাসনের পর অল্প কিছুদিন তিনি ওডারকার্ক অ্যান দে আমস্টেল গ্রামে সময় কাটিয়েছিলেন বলে অনুমান করা হয় এবং তারপর পুনরায় আমস্টারডামে ফিরে আসেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে লিডেনের রিঞ্জনসবার্গে বাস করেছিলেন তিনি। লিডেনে বাস করার জন্যই আমস্টারডাম ত্যাগ করেছিলেন বারুচ স্পিনোজা। এইসময় প্রথাগত ইহুদি ধর্মের বিরোধিতার পর তার গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে খ্রিস্টানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা শুরু করেছিলেন। রিমনস্ট্র্যান্টদের খ্রিস্টান সম্প্রদায় কলেজিয়েন্টসের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন তখন। কলেজিয়েন্টদের সভাতেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তবে কখনই খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেননি৷ আসলে ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা কোনওদিনই পছন্দ করেননি স্পিনোজা৷ এসময় তিনি লাতিন বেনেডিক্ট ডি স্পিনোজা নাম গ্রহণ করেছিলেন। লিডেনে থাকার সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তিনি। ১৯৬৩ সালে ‘শর্ট ট্রিটিস অন গড, ম্যান অ্যান্ড হিজ ওয়েল-বিইং’ তাঁর প্রাথমিক রচনাগুলির মধ্যে অন্যতম। এই রচনাটি তাঁর আধিভৌতিক, জ্ঞানতাত্ত্বিক এবং নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি জনসমক্ষে প্রকাশ করার প্রয়াসে লিখেছিলেন তিনি।

১৬৬৩ সালে আমস্টারডামে ফিরে দেকার্তের ‘প্রিন্সিপাল অফ ফিলজফি’র ওপরে একটি কাজ শেষ করেন তিনি যেটি ‘দেকার্ত’স প্রিন্সিপাল অফ ফিলজফি, পার্ট ওয়ান অ্যান্ড টু, ডেমনস্ট্রেটেড ইন দ্য জিওমেট্রিক্যাল ম্যানার’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এই কাজটির সঙ্গে ‘মেটাফিজিকাল থটস’ নামে একটি সংক্ষিপ্ত পরিশিষ্ট অংশ যুক্ত ছিল। ১৬৬৩ সালেই স্পিনোজা হেগের কাছে ভুরবার্গ শহরে চলে আসেন। সেখানে তিনি তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ দর্শনগ্রন্থ ‘দ্য এথিক্স’-এর কাজ শুরু করেন। সেখানে বেশ কিছু দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, ধর্মতাত্ত্বিকদের সঙ্গে কাজ করতে থাকেন ‘দ্য এথিক্স’-এর সংকলনটির জন্য। অবশ্য ইতিমধ্যে দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য তিনি লেন্স-গ্রাইন্ডার এবং যন্ত্র প্রস্তুতকারক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি রচনা করতে থাকেন ‘থিওলজিকাল পলিটিক্যাল ট্রিটিজ’ যা একটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং সাংবিধানিক সরকারের বিশ্লেষণ। ১৬৭০ সালে বেনামে এটি প্রকাশিত হয়েছিল। প্রচুর সমালোচনা হয়েছিল এই গ্রন্থটির এবং ১৬৭৪ সালে আইনত নিষিদ্ধ করা হয় এই বইটিকে। ভুরবার্গে থাকার সময় বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান হাইজেনসকে প্রায় ৪০ ফুটের একটি সুবৃহৎ ফোকাল লেন্থ টেলিস্কোপের জন্য গণনার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছিলেন বারুচ স্পিনোজা। তিনি শুধু লেন্স নয়, টেলিস্কোপ এবং মাইক্রোস্কোপ তৈরির জন্যও পরিচিত ছিলেন। হাইজেনস তাঁর লেন্সের গুণমানের প্রশংসা করেছিলেন। সেখানে লাইবনিজ দেখা করতে গিয়েছিলেন স্পিনোজার সঙ্গে।

১৬৭০ সালে স্পিনোজা চলে যান হেগ শহরে। সেখানেও ‘দ্য এথিক্স’-এর কাজ করেছিলেন তিনি, তাছাড়া রচনা করেছিলেন একটি অসমাপ্ত হিব্রু ব্যাকরণ, শুরু করেছিলেন ‘পলিটিক্যাল ট্টিটিজ’, বাইবেলের ডাচ অনুবাদ এবং দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ  ‘অন দ্য রেনবো’ এবং ‘অন দ্য ক্যালকুলেশন অফ চান্সেস’। এগুলি ছাড়াও আরও অন্যান্য প্রবন্ধের কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। স্পিনোজাকে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখান করেন। তিনি ভেবেছিলেন এই পদ তাঁর চিন্তার স্বাধীনতায় বাধা দিতে পারে।

অবশেষে ১৬৭৬ সালে স্পিনোজার প্রধান দার্শনিক কাজ ‘দ্য এথিক্স’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। সেবছরই লাইবনিজ এই বই নিয়ে আলোচনার জন্য হেগ শহরে আসেন। স্পিনোজার নীতিশাস্ত্র পাঁচটি অংশ নিয়ে গঠিত। প্রথমটি ঈশ্বর এবং পদার্থের অর্থ সম্পর্কে, দ্বিতীয় অংশটি মন এবং জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম অংশগুলি সাধারণত নৈতিক আলোচনার সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে হয়, যেমন আবেগ, আবেগের প্রতি মানুষের দাসত্ব, এবং অবশেষে বুদ্ধির গুণে মানুষের স্বাধীনতা। গ্রন্থটির কেন্দ্রীয় উদ্বেগ হল ঈশ্বরের বিবেচনা থেকে জ্ঞান ও আবেগ এবং তাদের দ্বন্দ্বের বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষের স্বাধীনতার উপলব্ধির দিকে অগ্রসর হওয়া। এই গ্রন্থে ঈশ্বরকে অসীম বৈশিষ্ট্য সমন্বিত একটি পদার্থ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন স্পিনোজা, সেই প্রতিটি বৈশিষ্ট্য শাশ্বত এবং অসীম সারমর্মকে প্রকাশ করে। ঈশ্বরকে মহাবিশ্বের সঙ্গে অভিন্ন করে দেখিয়েছেন তিনি। এই জগতের বাইরে ঈশ্বর নামে আলাদা কিছুর অস্তিত্ব স্বীকার করেননি তিনি। এই ‘এথিক্স’ গ্রন্থে তিনি বলেন, মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটে, তা প্রকৃতির বা বস্তুর বা ঈশ্বরের অপরিহার্য প্রকৃতি থেকেই উদ্ভুত। তিন ধরনের জ্ঞানের কথা বলেছেন তিনি, অভিজ্ঞতার জ্ঞান, যুক্তি ও আবেগ জড়িত জ্ঞান এবং ঈশ্বরের জ্ঞান। স্পিনোজার মতে, এই ঈশ্বরের জ্ঞানের জন্য যৌক্তিকতার প্রয়োজন। তিনি মনে করতেন ইন্দ্রিয় উপলব্ধি যা কিনা বাস্তব এবং প্রয়োজনীয় হলেও সত্য আবিষ্কারের জন্য পর্যাপ্ত নয়।

স্পিনোজার দর্শনকে যুক্তিবাদী চিন্তাধারার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেকার্তের পথ অনুসরণ করে স্বচ্ছ এবং স্বতন্ত্র ধারণা নিয়ে যৌক্তিকতার সাহায্যে সত্যকে বোঝার লক্ষ্যে অগ্রসর হয়েছিলেন তিনি৷ বাহ্যিক কোনও কিছুর সাহায্য ছাড়া যার অর্থ বোঝা যায় স্পিনোজা তাকেই পদার্থ বলেছেন এবং ঈশ্বরকে অসীম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পদার্থ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। স্পিনোজার জগতে কোনও কিছুই আকস্মিকভাবে ঘটে না। নির্দিষ্ট প্রয়োজন সিদ্ধ করতেই পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের অস্তিত্ব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি৷ ভালো, মন্দ ইত্যাদি ব্যাপারগুলি তাঁর কাছে আপেক্ষিক। যৌবনে দেকার্তের মতকেই প্রাধান্য দিয়ে ভেবেছিলেন যে, শরীর ও মন দুই পৃথক পদার্থ। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি জোরের সঙ্গে এই মতের বিরোধিতা করে বলেন, শরীর ও মন পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উভয়েই সার্বজনীন পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। মন আসলে শরীরেরই একটি ধারণা ছাড়া কিছু নয়। শরীরের পরিবর্তন ঘটলে  সমান্তরালভাবে মন নামক ধারণাটিরও পরিবর্তন হয়। স্পিনোজার আবেগ সম্পর্কিত তত্ত্বও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ ইচ্ছা, আনন্দ এবং দুঃখ এই তিনরকম আবেগের কথা বলেছিলেন তিনি।

ফুসফুসের অসুস্থতার সঙ্গে দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৬৭৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি হেগ শহরে কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই বারুচ স্পিনোজার মৃত্যু হয়।

2 comments

আপনার মতামত জানান