দেউরি মন্দির

দেউরি মন্দির

রাঁচি থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে টাটা-রাঁচি হাইওয়ের ওপর অবস্থিত দেউরি মন্দির প্রায় ৭০০ বছর প্রাচীন। স্থানীয়দের বিশ্বাস এই মন্দিরের দেবী মা খুবই জাগ্রতা। এই মন্দিরে আসা সকল ভক্তদের সব প্রার্থনা পূরণ হয় বলেই তাদের বিশ্বাস। মন্দিরটি স্থানীয়দের মধ্যে বহুদিন ধরেই জনপ্রিয় হলেও এর জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায় যখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে এই মন্দিরে নিয়মিত আসতে দেখা যায়। যদিও ধোনি ছোটবেলা থেকেই এই মন্দিরে আসতেন কিন্তু সেই সময় মানুষজন তাঁকে চিনত না। তিনি জনপ্রিয় হওয়ার পর মন্দিরে তার আসা মানুষের চোখে পড়তে শুরু করে।

এই মন্দির নিয়ে বিভিন্ন জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। বিশ্বাস করা হয় এই মন্দির মহাভারতের যুগ থেকে আছে এবং পাণ্ডবরা তাদের অজ্ঞাতবাসের সময় এই মন্দিরে পূজা দিয়েছিলেন। এমনও জনশ্রুতি আছে যে কলিঙ্গ যুদ্ধের সময় সম্রাট অশোক তাঁর সৈন্যদের নিয়ে এই মন্দিরে পূজা দিয়েছিলেন। একটি জনশ্রুতি অনুসারে অষ্টাদশ শতাব্দীতে তামারের রাজা দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশ পান যে জঙ্গলের মধ্যে দেবী মায়ের একটি মন্দির আছে এবং দেবী মা সেখানে পূজা পেতে আগ্রহী। রাজার আদেশে গ্রামবাসীরা জঙ্গল পরিষ্কার করে মন্দিরটি আবিষ্কার করে এবং সেই থেকেই এই মন্দিরে পূজা হয়ে আসছে। বলা হয় যারাই এই মন্দিরের কাঠামো পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিল তাদের নাকি দেবতদের রোষে অনেক ক্ষতি হয়েছিল।

ঠিক কোন সময় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা নিয়ে ভিন্নমত আছে। তবে এই মন্দিরের পাথরের বয়স থেকে আন্দাজ করা হয় মন্দিরটি দশম থেকে একাদশ শতকে নির্মিত। মন্দির চত্বরে ঢুকলেই মন্দিরের যে কাঠামো চোখে পড়ে সেটি মন্দিরের বাইরের আবরণ যা বেলেপাথর দিয়ে তৈরি। এই আবরণে মন্দিরের গায়ে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি খোদাই করা আছে। খোদাই করা রঙিন এই মূর্তিগুলো খুবই দৃষ্টিনন্দন। এই ভেতরে প্রবেশ করলে আদি মন্দির। আদি মন্দিরটি আকারে অনেক ছোট। পাথরের ওপর পাথর থেকে কোনও সিমেন্টিং উপাদান ব্যবহার না করে এই মন্দিরটি তৈরি হয়েছে। এই মন্দিরের ভেতরে রয়েছে গর্ভগৃহ। গর্ভগৃহের প্রবেশপথ ছোট এবং সরু। একজনই প্রবেশ করতে পারে। আদি মন্দিরের বাইরের দেওয়ালে রয়েছে গণেশের মূর্তি। এই মন্দিরের একটি বিশেষত্ব হল মন্দিরে ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের পাশাপাশি পাহান নামক উপজাতির পুরোহিতরাও পূজা করেন।

গর্ভগৃহে রয়েছে পাথরের তৈরি দেবী দুর্গার মূর্তি। মূর্তিটি দেখলেই বোঝা যায় এই মূর্তি বহু প্রাচীন। মূর্তির একটি বিশেষত্ব আছে। সাধারণভাবে দেবী দুর্গার দশটি হাত থাকলেও এখানে দেবীমূর্তির ষোলটি হাত। ভক্তদের বিশ্বাস মা এখানে খুবই জাগ্রতা এবং সকল ভক্তদের মনের ইচ্ছা পূরণ করেন তিনি।

বিভিন্ন উৎসবে এখানে ভিড় হয় প্রচুর। ভক্তরা তাদের মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য বাঁশের উপর হলুদ এবং লাল সুতো বেঁধে দেয়। মন্দির চত্বরে পূজার সামগ্রী কিনতে পাওয়া যায়।

আপনার মতামত জানান